কোরআনের যে ৪ ঘটনা ঈমান বৃদ্ধি করবে
প্রকাশিত:
৯ নভেম্বর ২০২৫ ১২:২৬
আপডেট:
৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৪
বর্তমান সময়ে আমারা বিভিন্ন মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করি। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী মানসিক চাপ আমাদের এতো বেশি পীড়া দেয় যে আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত পুরস্কার ও প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই আগের প্রজন্মের মানুষেরা হতাশা, বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপের মুহূর্তগুলোতে কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেছিলেন।
এমন প্রতিকূল মুহূর্তগুলোতে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি। কারণ, দৃঢ় ঈমান একজন মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ শুধু আল্লাহর হাতে, তিনিই ভাগ্য নির্ধারণকারী। কষ্টের মুহূর্তে এই সত্যটি মানুষকে এগিয়ে চলার শক্তি ও সাহস দেয়।
কোরআনে অসংখ্য গল্প ও ঘটনা রয়েছে, যেগুলো শুধু ইতিহাস নয়, বরং আমাদের জীবনের জন্য অমূল্য শিক্ষা। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্টে সৃষ্টি করেছি। (সুরা আল-বালাদ, আয়াত ৪)। এই কষ্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাই মানুষকে পরিশুদ্ধ করে, পাপ মোচন করে এবং ধৈর্য ধরলে বিশাল পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইউসুফ (আ.)-এর পবিত্রতা ও ধৈর্য
নৈতিকতা রক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় বর্তমান যুগের তরুণ-তরুণীদের। হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা আমাদের শেখায়—ধৈর্য, আত্মসংযম ও ঈমানের জোরে সব প্রলোভন জয় করা সম্ভব।
আল্লাহ তায়ালা তাকে নবী বানিয়েছিলেন এবং মিসরের রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অপর্ণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি জীবনের প্রথম দিনগুলোতে দাস হিসেবে বিক্রি হয়েছিলেন, মিথ্যা অভিযোগে কারাবন্দি হয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বিচ্যুত হননি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে মিশরের শাসক বানিয়ে মর্যাদা দান করেন।
এই গল্প স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের সাহস প্রদান করে যে, প্রতিটি পরীক্ষার পরই আছে পুরস্কার। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত পুরস্কার হয়তো দুনিয়ায় পাওয়া যাবে নয়তো পরকালে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
মরিয়ম (আ.)-এর অলৌকিকতা
হজরত মরিয়ম (আ.) আল্লাহর এক অনন্য বান্দী, যিনি পূর্ণ আনুগত্য ও পবিত্রতার প্রতীক। তার মাধ্যমে আল্লাহ প্রকাশ করেছেন পিতা ছাড়াই হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের মতো এক বিস্ময়কর নিদর্শন। মরিয়ম (আ.)-এর জীবনের এই ঘটনাই প্রমাণ করে, আল্লাহ চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করেন। তাই কোরআনে তার নামে একটি পূর্ণ সুরা ‘সুরা মরিয়ম’ অবতীর্ণ হয়েছে।
ইউনুস (আ.)-এর দোয়া
হজরত ইউনুস (আ.)-এর ঘটনা ধৈর্য ও তাওবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি নিজ জাতির ওপর অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন, পরে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়ে এক মাছের পেটে বন্দি হন। তখন তিনি হৃদয়ের গভীর থেকে আহ্বান জানান— ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমিন।’
আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে মুক্তি দেন। এই ঘটনাটি আমাদের শিক্ষা দেয় আল্লাহর কাছে ফিরে আসলে একজন মুমিন কখনো ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
আয়েশা (রা.)-এর সম্মান পুনরুদ্ধার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) এক সময় মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত হয়েছিলেন। সমাজের কঠিন সময় পেরিয়ে অবশেষে আল্লাহ নিজেই কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে তার পবিত্রতা ঘোষণা করেন। পরে তিনি হয়ে ওঠেন ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী আলেম ও নেত্রী।
জীবনের পরীক্ষায় ধৈর্যই আশ্রয়
কোরআন আমাদের মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ তায়ালা নাজিল করা এই আয়াতটি, যেখানে বলা হয়েছে, আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জীবন ও ফলের ক্ষয় দ্বারা; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।
এই আয়াতই মুসলমানদের আশার আলো। কারণ জীবনের প্রতিটি বিপর্যয় আমাদের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়।
আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বশ্রেষ্ঠ
কোরআনের গল্পগুলো একটিই বার্তা দেয়। আর তাহলো কষ্ট মানেই ব্যর্থতা নয়, বরং সঠিক পথে থাকার প্রমাণও হতে পারে এই কষ্ট। আমরা যখন যা চাই, তা নয়; আল্লাহ কখন আমাদের কী প্রয়োজন তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
যে বিশ্বাস নিয়ে নবী-রাসুলেরা বিপদেও আশাহত হননি, সেই বিশ্বাসই আজ আমাদের প্রেরণা হোক। জীবনের ঝড়ঝাপটা যখন ঘিরে ধরে, তখন কোরআনের এই ঘটনাগুলোই হয়ে ওঠে আমাদের জন্য শান্তির বার্তা ও শান্ত্বনার প্রলেপ। মনে রাখতে হবে কোরআনের এই ঘটনাগুলো শুধু অতীতের গল্প নয়, বরং আমাদের আজকের জীবনের পথনির্দেশক।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: