প্রধান উপদেষ্টার ৫০ শতাংশের নির্দেশনা থাকলেও সবার সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা ইতোমধ্যেই ৭৫ শতাংশ নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তা জানান।
এই সভায় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম মহানগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা অবগত আছেন, গত ১৪ মে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফরে গিয়েছিলেন এবং সে সময় তিনি চলতি বছরের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার নির্দেশনার ভিত্তিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে।
সভায় ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার জেনারেল শামসুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টার ৫০ শতাংশের নির্দেশনা থাকলেও, সকলের সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা ইতিমধ্যেই ৭৫ শতাংশ নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
ড. জিয়াউদ্দিন জানান, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের ১১৩টি স্পটে আট থেকে নয় ঘণ্টা জলাবদ্ধতা ছিল, যা ২০২৫ সালে এসে কমে ২১টি স্পটে দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। আগামী বছর এই জলাবদ্ধতার স্পটের সংখ্যা আরও কমে ১০টি স্পটে সীমিত হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা পুরোপুরি সহনীয় মাত্রায় নিরসন করা সম্ভব হবে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সভার আলোচনায় জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টন বর্জ্য চট্টগ্রামের নদী, খাল ও ড্রেনে জমা হচ্ছে। এই বর্জ্য অপসারণ করে খাল ও নদীগুলোর প্রবাহমানতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিস্তারিত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৩,২০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়, কিন্তু বর্তমান সক্ষমতা ব্যবহার করে তারা সর্বোচ্চ ২,৭০০ থেকে ২,৮০০ টন অপসারণ করতে পারেন। অবশিষ্ট বর্জ্য থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এবং সরকারের কাছে আরও প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানান।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাবের বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে, এবং এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, এই বছরের অগ্রগতি সরকারের প্রত্যাশিত প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন সরকার দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করবে। তিনি দ্বিতীয় ধাপে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শ ও করণীয় সম্পর্কে লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা বলেছেন।
প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হওয়ার পরে যাতে সঠিক সুফল পাওয়া যায়, সেজন্য পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব নেওয়ার এবং তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা চাকতাই খালকে ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ হিসেবে অভিহিত করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চান। জবাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, চাকতাই খালে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ১২টি পাম্প বসানোর কাজ চলছে, যার মধ্যে ১০টি ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। প্রতিটি পাম্প প্রতিদিন ২ কোটি লিটার পানি অপসারণে সক্ষম, যা ১২টি পাম্প চালু হলে ২৪ কোটি লিটার হবে। এছাড়া পুরো মহানগরজুড়ে আরও ৫৬টি পাম্প বসানোর কার্যক্রম চলছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমি দান করায় তাঁদের ধন্যবাদ জানানো হয়। যারা জমি দিয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, সভায় স্থানীয় নাগরিক সমাজ এবং দুটি বড় রাজনৈতিক দল, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামকে, নিজেদের অর্থায়নে খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয়।