বুধবার, ১২ই নভেম্বর ২০২৫, ২৮শে কার্তিক ১৪৩২


বাণিজ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পরও কমছে না পেঁয়াজের দাম


প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩০

আপডেট:
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:১৩

ফাইল ছবি

দেশে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পেঁয়াজের দাম। মাত্র ১০ দিন আগেও প্রতিকেজি পেয়াঁজ বিক্রি হতো ৭৫ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে। গত ২ নভেম্বর থেকে এটির দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। মাত্র দুই-তিন দিনের মধ্যে দাম বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ঘোষণা আসে। সবশেষ গত ৯ নভেম্বর বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। উপদেষ্টার ওই হুঁশিয়ারির পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, আজ কিছুটা ছোট সাইজের প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে। আর বাছাইকৃত বড় সাইজের পেঁয়াজ ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গতকালের চেয়ে আজ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ধলপুর বাজারের আকলিমা জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী রমজান আলী বলেন, ‘আমরা শ্যামবাজার পাইকারি আড়ত থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজ এনে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে বলে মনে হয় না। তবে, ভারতের পেঁয়াজ আসলে দেশি পেঁয়াজেরও দাম কমে আসবে।’

শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ গতকালের চেয়ে পেঁয়াজের দাম মানভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল দিনের এক পর্যায়ে ছোট সাইজের পেঁয়াজ ৯৭-৯৮ টাকায়ও বিক্রি হয়েছেআজ তা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর বড় সাইজের পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গতকাল সর্বোচ্চ ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কেন দাম বাড়ছে

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ দৃশ্যমান। প্রথমত- উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, দ্বিতীয়ত- পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব, তৃতীয়ত- মৌসুমের শেষ পর্যায় এবং চতুর্থত- বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়া। সাধারণত, প্রতিবছরে নিদিষ্ট কোনো একটা সময়ে এই কারণগুলোর জন্য পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমূখী দেখা যায়। এবছর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানি বন্ধ থাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর মৌসুম শেষের দিকে এসে পেঁয়াজের দামে বড় উল্লোফন দেখা যায়। বিশেষ করে অক্টোবর-ডিসেম্বরে বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা যায়। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে না আসা পর্যন্ত অস্থিরতা চলমান থাকে। এই সংকট ব্যবসায়ীরাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করেন অনেক ক্ষেত্রে। সরকারের উচিত বছরের শেষ সময়কে টার্গেট করে স্থায়ী একটা সমাধান খোঁজা।

সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, পেঁয়াজের সাম্প্রতিক দরবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে। দেশে কৃষিপণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে প্রতিবেশী ভারতে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোর ওপারে কাছাকাছি প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ জমা করা হয়েছে। এই পেঁয়াজ আমদানি করে মোটা মুনাফা বাগাতে একটি পক্ষ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে আগের মৌসুমের সাড়ে ৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও চলতি মাসেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি মাসে ১ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। আগামী মাসে আসবে এ জাতেরই আরও ২ লাখ ৫ হাজার টন। সেই তথ্যে দেশে এখন পেঁয়াজের কোন সংকট থাকার কথা নয়।

জানা গেছে, ভারতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে কেজিপ্রতি ৮ রুপিতে (প্রায় ১২ টাকা) নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের আমদানির অনুমোদন দিলে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের লাভ হবে। বিপরীতে ক্ষতি হবে দেশের কৃষকের। এ কারণে বাণিজ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ যৌথ কমিটির গত সপ্তাহের বৈঠকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আমদানি করা হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা যা বলছেন

গত ৯ নভেম্বর (রোববার) সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আর অনুমতি দেওয়া হবে না।’

তিনি জানান, ‘পেঁয়াজ আমদানি করতে ইচ্ছুক ২ হাজার ৮০০ জনের আবেদন আছে মন্ত্রণালয়ে। এর ১০ শতাংশকেও যদি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বাজারে ধস নামবে। আমরা ধস নামাতে চাই না।’

তবে, দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে লাগাম টানতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।

ট্যারিফ কমিশন বলেছে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট‍্যারিফ কমিশন সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। যেখানে দেখা যায় কিছু মধ‍্যসত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও তা অনেক বেড়ে গেছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে এই পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৩০ টাকার মধ‍্যে রয়েছে। তাই সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন‍্য দ্রুত অনুমতি দিতে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top